প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অতীতের মতো সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ সবসময় আপনাদের (হিন্দু সম্প্রদায়) পাশে ছিলাম এবং থাকবো।’
রবিবার (২২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাঅষ্টমীর দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে ভাষণে এ কথা বলেন।
দেশ-বিদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে এই পূজা সম্পন্ন হোক, সেটাই আমরা চাই। আমরা পাশে আছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মী প্রত্যেকেই পাশে থাকবেন। কোরও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন এখানে না ঘটতে পারে, সেজন্য আমরা সবাই সতর্ক থাকবো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে যুদ্ধ করেই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, ’৭৫-এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে। এই বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ’৯২ সালের পর এবং ২০০১ সালে এবং এরপরেও বারবার আঘাত এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগ সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম, পাশে আছি।’
বাংলাদেশের জনগণ উদারমনা এবং সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে কারণেই আমাদের স্লোগান ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ঠিক এইভাবেই আমরা সবাই উৎসব পালন করে যাচ্ছি। আজ সারা দেশে ৩২ হাজারের ওপর পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা চলছে। তার নিজের এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া-কোটালিপাড়ায় ৪৪০টি পূজামণ্ডপ এবং ঢাকায় ২৪৬টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই পূজা সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের যতটুকু করার আমরা করেছি।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবির অনেকগুলোই সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু দিন আগেই এর নেতাদের সঙ্গে তিনি বসেন এবং সেখানে বিস্তারিত বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ যেহেতু উৎসবের দিন, তাই কী দিলাম, কী করলাম বা কী পেলাম, কী পেলাম না সে কথায় আমি যাবো না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এই মাটির সন্তান সবাই। এই মাটিতে নিজ নিজ অধিকার নিয়ে আপনারা বসবাস করবেন। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে সবাই এক হয়ে যুদ্ধ করেছেন। তাই এখানে সবারই সমান অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার যাতে বলবৎ ও সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে, আমরা সবসময় সেই চেষ্টাই করি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারাও আশীর্বাদ করেন বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। এখন ঘরে ঘরে খাবার আছে, বিদ্যুৎ আছে, চিকিৎসাসেবা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। ২০০৮-এর নির্বাচনে বলেছিলাম— ডিজিটাল বাংলাদেশ করবো, সেটা আমরা করে দিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ইনশাআল্লাহ, আমরা সেটাও করতে পারবো। সারা দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া, কেননা মানুষের কল্যাণেই আমাদের কাজ। আর মানুষের কল্যাণ করাকেই আমরা একমাত্র দায়িত্ব বলে মনে করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবসময় বিশ্বাস করি—সব ধর্ম বর্ণের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। সুরা কাফেরুনের আয়াত ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদীন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোরআন শরিফেই সবাইকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। কাজেই কেউ কারও ওপর হস্তক্ষেপ করবে না।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোমেন মণ্ডল।
এ সময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে প্রধানমন্ত্রী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন এবং পরে নৃত্য উপভোগ করেন। খবর: বাসস